কক্সবাজারে কটেজে ঝটিকা অভিযানে আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা : কারাগারে প্রেরণ

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার :

কক্সবাজার কলাতলি কটেজ জোন এলাকার বেশ কয়েকটি পতিতালয় নামের কটেজে অভিযান চালিয়ে পতিতা ও খদ্দের সহ শতাধিক আটক করেছিল। সহকারী পুলিশ সুপার আদিবুল ইসলামের নেতৃত্বে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ এ অভিযান চালায়। আটককৃতদের থেকে যাচাই বাচাই শেষে ৪২ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছে পুলিশ।

আটককৃতদের মধ্যে ৪২ জন সহ পলাতক আরো ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৮ জনসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে শনিবার মামলা দায়ের করা হয়েছে। কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই বেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ সালের ১২/১৩ ধারায় পতিতালয় পরিচালনা, পতিতাবৃত্তি ও সহায়তা করার অপরাধে এ মামলাটি দায়ের করেন।
শনিবার বেলা তিনটার দিকে এসব পতিতা, খদ্দের এবং ম্যানেজারদের কঠোর নিরাপত্তায় প্রিজন বাস যোগে সরাসরি কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। কারাগারে নেওয়া প্রাক্কালে থানার বাইরে ও আশপাশ এলাকায় উৎসুক জনতা এবং আটককৃতদের অভিভাবকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

মামলার আসামী ও কারাগারে প্রেরিতরা হচ্ছে, চট্টগ্রাম সাতকানিয়া ১নম্বর ওয়ার্ড বণিক পাড়া মৃত বিকাশ ধরের ছেলে অভিক ধর প্রকাশ অভি ধর ( সহকারী ম্যানেজার, সী টাউন কটেজ), উখিয়া উপজেলা জালিয়া পালং ইনানী জুমপাড়া গ্রামের ছুরত আলমের ছেলে বেলাল উদ্দিন,সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ থানার নিউমার্কেট পূর্বপাড়া মহিম সরদারের মেয়ে তোবা সুলতানা মোহনা, খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গা থানার বর্ণালী ইউনিয়নের নতুন পাড়া এলাকা আমির হোসেনের মেয়ে মরিয়ম আক্তার, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার পুটিভিলা দাসী মাঝিপাড়ার ফরিদ আলমের মেয়ে লিজা মনি, বগুড়া শাহজাহান মাঝিরা এলাকার মৃত শহিদুল ইসলামের স্ত্রী রানু বেগম, উখিয়া উপজেলার ইনানি আল সরপ হ্যাচারী পাশে বাদামতল এলাকার মৃত আবুল বশরের মেয়ে কোহিনুর আক্তার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার সাব নগর কাচারীপাড়া সেতু মিয়ার মেয়ে মোছাম্মদ বৃষ্টি আক্তার,

কক্সবাজারের রামু থানার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ড নতুন মোড় এলাকার আবুল কাশেমের মেয়ে জেসমিন আক্তার, কক্সবাজার সদরের পোকখালী ইউনিয়নের পূর্ব গোমাতলী এলাকার ইউসুফ নবীর মেয়ে শাকিলা জান্নাত উর্মি, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানা সাঘাটা ইউনিয়নের মোহাম্মদ ইসমাইল এর মেয়ে ডেইজি আক্তার, বান্দরবান জেলার আলীকদম থানাধীন আব্বাস কার্বারী পাড়া হাসানের মেয়ে পিংকি আক্তার, টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল থানাধীন দেউলিয়া গ্রামের মৃত আবদুল হামিদের মেয়ে রেশমা আক্তার প্রিয়া, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানাধীন কুদলা ইউনিয়নের কোদলা পুকুরপাড় এলাকার মোঃ আব্দুল হাকিমের ছেলে শহিদুল্লাহ প্রকাশ মুন্না, চট্টগ্রামের পটিয়া থানাধীন বড়লিয়া আনজুর হাট গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে সিরাজুল ইসলাম পাবেল, কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড পাহাড়তলী জিয়ানগর এলাকার মোঃ সুলতানের ছেলে মোঃ শাহনেওয়াজ। চলতি বছর পুলিশ ১০৩ টাকা খরচে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রাপ্ত কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ফুলছড়ি গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে আলমগীর,

ময়মনসিংহ জেলার নিকলী থানাধীন সাধনপুর (আঠারবাড়ি স্কুলের পিছনের বাড়ি) মৃত মোঃ মুসলিমের মেয়ে হাসনা আক্তার মুন্নি, কক্সবাজারের টেকনাফ অলিয়াবাদ ডেইলপাড়ার নুর ইসলামের মেয়ে রাহামা আকতার, চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানাধীন ফরাইকোড়া বজেন্দ্র লাল দাসের বাড়ি বর্তমানে বৈদ্যঘোনা হারাধন দাসের বাড়ির তপন দাসের ছেলে ইমন দাশ, রামু উপজেলার রাজাকুল নোয়াপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের মেয়ে শারমিন আক্তার, চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা মগবাজার এলাকার মৃত রহমত উল্লাহর মেয়ে রিনা আকতার, মহেশখালী সর্দার পাড়া মাতারবাড়ি আমির হোসনের ছেলে মো.রশিদ, চকরিয়া ডুলাহাজারার বালুরচর এলাকার নুরুচ্ছফার ছেলে রেজাউল করিম, বান্দরবান আলীকদম থানাধীন সদর ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন পাঠানের ছেলে মোহাম্মদ আলী আকবর এর ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম, কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়া আরিফুল ইসলামের ছেলে এরফানুল হক বাপ্পি প্রকাশ আপ্পি, টেকনাফ উপজেলার জাগির আহমদের মেয়ে রাশেদা বেগম, কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও দরগাপাড়া মৃত ওসমান সরওয়ার এর মেয়ে নুর নাহার আক্তার, কক্সবাজার সদরের উত্তর বড়ঘোপ ইশাখালীর রহমত উল্লাহর ছেলে মোহাম্মদ রেজাউল করিম,

রামু উপজেলার ২নম্বর ওয়ার্ড মিয়াজী পাড়া সুলতান আহমদের ছেলে মোঃ শাহাবুদ্দিন, রামু এলাকার দারিয়ার দিঘী মৌলভীপাড়া মৃত ফরিদের মেয়ে রুবি আক্তার, কক্সবাজার সদরের খুরুস্কুল কুলিয়াপাড়ার মৃত আব্দুল করিম এর মেয়ে আসমা আক্তার, চাঁদপুর জেলার কচুয়া কাশেমপুর শরণখোলা এলাকার আলী আরশাদ এর মেয়ে তৃষ্ণা আক্তার, মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী আনসার আলী ছেলে মোঃ জামাল উদ্দিন, টেকনাফ এলাকার মৃত নূরে আলমের মেয়ে হাসিনা আক্তার, কক্সবাজারের পেকুয়া চরপাড়া গ্রামের রহমত উল্লার স্ত্রী রুমি আক্তার, চকরিয়া ডুলাহাজরা ইউনিয়নের মাইজ পাড়া গ্রামের আবুল বছরের মেয়ে সুমি আক্তার, কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর ডুলাফকির রাস্তার মাথা পূর্ব নাপিতখালী এলাকায় নুরুল ইসলামের ছেলে মোঃ সাদেক, গোপালগঞ্জ মুকসুদপুর চাউসা গ্রামের বজলু ভুইয়ার মেয়ে রুমা আক্তার কেয়া, মহেশখালী শাপলাপুর বারিয়াপাড়ার আবু শামার মেয়ে রেহেনা আকতার, চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানাধীন দেওয়ানহাট ৩৭৮ সিরাজদৌলা রোড এলাকার মৃত আফজল আলী ছেলে ইলিয়াস।

এছাড়াও উক্ত মামলায় পলাতক আসামি করা হয় সী টাউন কটেজের ভাড়াটিয়া মালিক মহেশখালীর বাসিন্দা সিরাজ সওদাগর, চকরিয়া ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বালুর চর এলাকার মোঃ ইদ্রিস, উখিয়া মরিচ্যা এলাকার বাসিন্দা ও ম্যানেজার এসএ গেস্ট হাউস মোহাম্মদ সেলিম, চকরিয়ার ডুলাহাজারা এলাকা বাসিন্দা ও রিয়ান গেস্ট হাউসের ম্যানেজার সাগর, চকরিয়ার ডুলাহাজারা এলাকার বাসিন্দা ও আল কাফি কটেজের ম্যানেজার মালিক মোহাম্মদ মান্নান, কক্সবাজার সদরের লাইট হাউজ ফাতের ঘোনা এলাকার বাসিন্দা ও এসএ গেস্ট হাউসের মালিক মোঃ ওসমান।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই বেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৪৮ জনের নামে নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা ৮জনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ সালের ১২/১৩, পতিতালয় পরিচালনা, পতিতাবৃত্তি ও সহায়তা করার অপরাধ। থানার মামলা নং- ৫৬, জিআর-৭৮৮।

অভিযানে আরো অংশ নেন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ খায়রুজ্জামান পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশনস্ এ্যান্ড কমিউনিটি পুলিশিং), মোঃ ইয়াছিন পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টিলিজেন্স) মোহাম্মদ আরিফ ইকবাল,এসআই রাজীব চন্দ্র পোদ্দার,এসআই আরিফ উল্লাহ, এসআই সনৎ বড়ুয়া, এসআই কাঞ্চন দাশ, এসআই প্রদীপ চন্দ্র দাশ, এসআই জহিরুল ইসলাম, এসআই বেলাল উদ্দিন, এসআই আবুল কালাম, এসআই আরফাতুল আলম, এএসআই লিটন মিয়া, এএসআই আবুল কাশেম, এএসআই বাবলু দেসহ সঙ্গীয় ফোর্স ।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ফরিদু উদ্দিন খন্দকার পিপিএম বলেন, গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজার সদর মডেল থানার পুলিশ সহকারী পুলিশ সুপার আদিবুল ইসলামের নেতৃত্বে সদর মডেল থানা পুলিশ কলাতলী লাইট হাউস কটেজ জোন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শতাধিক পতিতা ও খদ্দেরকে আটক করে। পরে স্বামী-স্ত্রী প্রেমিক-প্রেমিকা পরিচয় তাদের পরিচয় শনাক্ত করে অনেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ৫ প্রেমিক জুটিকে থানায় কাজি ডেকে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয়।

তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে তাহাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এলাকার আম জনতা ও পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চিতের লক্ষ্যে মামলায় অভিযুক্ত ও চিহিৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।